ইমিগ্রেশন নিউজ ডেস্ক :
অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির আগুনে ঘি ঢালছে মধ্যপ্রাচ্য যাওয়ার বিমানের টিকিট মূল্য। গত কয়েক মাসে সব সংস্থার টিকিটের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রবাসীদের অভিযোগ, একটি ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। সিন্ডিকেট করে এসব টিকিট দখল করে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
এখন দুবাইয়ে শুধু যাওয়ার জন্য গুনতে হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা। অথচ একই গন্তব্যে প্রতিবেশী নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান থেকে অর্ধেকের কম দামে মিলছে টিকিট। আবার ঢাকা থেকে সৌদি আরবের টিকিট পেতে খরচ হচ্ছে ৮০ হাজার টাকা। কোনো কোনো সময় আরও বেশি টাকা লাগছে। অথচ দেখা যায়, পাকিস্তানের ইসলামাদ থেকে রিয়াদে যেতে এমিরেটসের টিকিট আছে ২৫ হাজারের মধ্যে। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে রিয়াদে যেতে ৩৩ হাজার টাকায় টিকিট দিচ্ছে ফ্লাই দুবাই। আর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে রিয়াদের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে ২৮ হাজার টাকায়, ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজে।
তবে শুধু রিয়াদ নয়, সৌদির দাম্মাম বা জেদ্দায় যেতে হলেও ৭৫ হাজারের নিচে টিকিট মিলছে না। আরব আমিরাত, ওমান, কাতারে যেতেও চড়া দামে টিকিট করতে হচ্ছে প্রবাসীদের।প্রবাসীরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও সৌদি আরবে যেতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় টিকিট পাওয়া যেত। দুই বছর আগে এটি বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার হয়, আর করোনায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে আবার চালু হলে টিকিটের দাম ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর এখন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বেশি দিয়েও কেউ কেউ কিনছে টিকিট। সৌদিপ্রবাসীরা বলেন, ২০০৭ সালে প্রথম গিয়েছেন ২০ হাজার টাকায়। এবার যাচ্ছেন ৮৮ হাজার টাকায়।
আরেক সৌদিপ্রবাসী বলেন, সাড়ে তিন মাস আগে ১ হাজার ১৫০ রিয়াল (২৬ হাজার টাকা) দিয়ে টিকিট কিনে দেশে এসেছেন। চার এজেন্সি ঘুরে আগামী ৭ মে যাচ্ছেন ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় টিকিট নিয়ে।সিন্ডিকেটের অভিযোগ করেছেন আটাবের সদস্যরাও। তাঁরা বলেন, বিমান রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা। কিন্তু বেসরকারির চেয়ে তাদের টিকিটের দাম বেশি। তবু টিকিট পাওয়া খুব কঠিন। একটি ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সিন্ডিকেট করে এসব টিকিট দখল করে রাখা হয় চড়া দামে বিক্রি করতে।
টিকিটের দাম কমাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে দুদিন আগে বিমান মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করতে যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি টাকা লাগছে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে।
সংগঠনের নেতারা বলেন, সৌদি যেতে ২৫ হাজার টাকার টিকিট এখন ৮০ থেকে ৯০ হাজারের কমে পাওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, যাত্রীও কম যাচ্ছে না। তবু এত ভাড়া, এটি কোনো দেশে নেই।
করোনা সংক্রমণ এড়াতে ১৪ এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করা হয়। এরপর প্রবাসীদের সুবিধায় ১৭ এপ্রিল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ ফ্লাইট শুরু হয়। এরপর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি প্রবাসী নিজ নিজ কর্মস্থলে গেছেন বলে বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, টিকিটের বাড়তি দাম প্রবাসী কর্মীকেই দিতে হয়। তাই অভিবাসন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। টিকিট তো এখন সোনার হরিণ। প্রবাসীদের জন্য বিশেষ মূল্যে (লেবার ফেয়ার) টিকিট চালু করা জরুরি।