রিয়াজ মাহমুদ জুয়েল :
রুমে ঢুকে অভিনেতা চ্যালেঞ্জার কাকে যেন খুঁজছিলেন।
-এখানে কামাল সাহেব কোনজন?
আমি তাকালাম কামাল ভাইয়ের দিকে। তিনি নাকটা ঘষে লাজুক হাসেন। বললেন
-আসেন চ্যালেন্জার ভাই। বসেন। কেমন আছেন।
চ্যালেন্জার ভাই বসলেন। টিভিতে প্রিভিউতে কোন একটা নাটক চলছিল। আমি রিমোট দিয়ে বন্ধ করে তাঁদের সে মূহুর্তটি দেখছিলাম। শুনছিলাম।
-আপনি কামাল সাহেব!
চ্যালেঞ্জার সাহেব কেমন যেন বিস্মিত। বললেন, আমি তো দেখতেছিলাম রুমে মাত্র দু’জন। একজন উনি (আমাকে দেখিয়ে) আর একজন দেখলাম একজন বিদেশী মানুষ আপনি। আপনিই কামাল ভাই!!
কামাল ভাইয়ের হাসির শব্দে ছোট্ট ঘরটি ভরে উঠেছিল। আমি যেন মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতা।
চ্যালেন্জার ভাই কথার পর কথা জুড়ে দিয়ে গল্প বলেন :

-স্বীকৃতি (প্রযোজক স্বীকৃতি প্রসাদ বড়ুয়া) ফোন করে বলছিল যে কামাল ভাই আপনাকে এনটিভির ঈদের অনুষ্ঠানে নিতে বলেছেন। আমি ভাবলাম, না গেলে আমার নিশ্চয়ই কোন ক্ষতি হবে। এজন্য আজকের রেকর্ডিংয়ের কাজ শেষ করে ভাবলাম আপনার সাথে দেখা না করে যাওয়া ঠিক হবে না। মনে মনে ভয় কাজ করছিল। কল্পনা করে রেখেছিলাম রুমে ঢুকে দেখবো বিরাট একটা রুম, বড় একটা টেবিল। সে টেবিলের ওপাশে রাশভারি কোন কর্তা মহোদয় বসে থাকবেন।
কিন্তু আপনাকে দেখেতো ওরকম কোন ভীতিকর কিছু মনে হচ্ছে না। আমি তো ধন্ধে পড়ে গেলাম। আসলে আপনিই কামাল ভাই!! এটা আপনার রুম! এটা আপনার চেয়ার টেবিল! সব তো দেখি গোলমাল হয়ে গেল।
কামাল ভাই আরও লাজুক, আরও বেশি করে নাক ঘষেন, হাসেন, কুশল জেনে নিতে নিতে হুমায়ুন স্যারের (হুমায়ুন আহমেদ) সাথে চ্যালেন্জারের পরিচয় ও অভিনেতা হবার গল্প শোনেন, চ্যালেন্জার ভাইয়ের অন্তরে হুমায়ুন স্যারের জন্য অসীম কৃতজ্ঞতা। বেশ সময় কেটে গেল।
-আমার ক্ষূদ্র এ জীবনে আপনার মতন এত সুন্দর মানুষ কখনো দেখি নাই কামাল ভাই। আমার জন্য দোয়া করবেন। যাবার সময় চ্যালেন্জার ভাই কেমন যেন হয়ে গেলেন।
কামাল ভাইও বলেছিলেন
-আল্লাহ মালিক। আপনিও ভালো থাকবেন চ্যালেন্জার ভাই
চ্যালেন্জার ভাইয়ের মৃত্যু হলো, হুমায়ুন আহমেদও প্রয়াত হলেন। কামাল ভাইকে কি করে যে মরহুম, প্রয়াত ভাববো। আমারও হিসেবে গন্ডগোল হয়ে যায়। এখনও। এখনও। সব সময়। মাত্র তো একবছর হলো। মোস্তফা কামাল সৈয়দ। আপনার ছুটি আর শেষ হলো না!

”সন্ধ্যার নদীর জলে নামে যে আলোক
জোনাকির দেহ হতে- খুঁজেছি তোমাকে সেইখানে-”
-জীবনানন্দ দাস
রিয়াজ মাহমুদ জুয়েল : সাবেক প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এনটিভি